#পাঠক সমাচার

একজন জুয়েলের আত্মত্যাগ আর আমাদের আজকের পাকিস্তান প্রীতি !

“আমার আঙুল গুলা রাইখেন ডাক্তার, দেশ স্বাধীন হইলে আমি ন্যাশনাল টিমের হইয়া ওপেনিংয়ে নামুম, ক্যাপ্টেন হমু ”

১৯৫০ সালের ১৮ জানুয়ারি আমাদের মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার দক্ষিণ পাইকশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

ক্রিকেট রোমান্টিকরা তার ব্যাটিং জাদুতে মুদ্ধ হয়ে বলতেন, “পাড়ার ক্রিকেটের জন্য নয়, বরং জাতীয় দলে খেলার জন্য এই ছেলের জন্ম হয়েছে।” হয়তো ডাক পেয়েও যেতেন, কিন্তু বাদ সাধলো আগুনঝরা মার্চের সে স্বাধীনতার ডাক।

ঘর ছাড়তে পারছিলেন না মায়ের স্নেহের বন্ধনে বাঁধা থাকায়। কিন্তু সেটা বেশিদিন আটকে রাখতে পারলো না, ১৯৭১ সালের ৩১ মে সবকিছু ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন। যাওয়ার আগে মাকে নিজের বাঁধাই করা একটা ছবি দিয়ে বললেন, “আমি যখন থাকবো না, এই ছবিতেই আমাকে পাবে।”

বদিউজ্জামান, আলম, পুলু, সামাদ সহ অনান্যদের সাথে তিনিও যোগ দিলেন মুক্তিবাহিনীর ক্র্যাক প্লাটুনে। শুরু হয় তাদের গেরিলা অপারেশন। আক্রমনাত্মক ব্যাটসম্যান জুয়েল যেন যুদ্ধের ময়দানে আরো আক্রমনাত্মক। ক্রিকেট ব্যাটের মত অস্ত্রও সমান দক্ষতায় চালাতে পারতেন জুয়েল।

ঢাকার ফার্মগেট, এলিফ্যান্ট রোডের পাওয়ার স্টেশন, যাত্রাবাড়ী সহ একাধিক এলাকায় অতর্কিত হামলায় দিশেহারা করে দেন পাক সেনাদের। একটি গেরিলা অপারেশন থেকে নৌপথে ফেরার সময় রাজাকার ও পাকবাহিনীর অতর্কিত বুলেটের আঘাতে জুয়েলের হাতের তিনটি আঙ্গুলে মারাত্মক জখম হয়েছিল। আর ঠিক ওই মুহুর্তে তাঁর প্রথম চিন্তা ছিল, “এই হাত দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলতে পারব তো?”

আঙ্গুলে গুলি লাগার পরে জুয়েল থাকতেন হাবিবুল আলমদের দিলু রোডের বাসায়। তার হাত ড্রেসিং করে দিতো আলমের মেজ বোন আসমা, যাকে সবাই মেজপা বলতো।

ড্রেসিং করার সময় খুব কষ্ট হত। এজন্য মেজপা জুয়েলের মনযোগ ঘোরানোর জন্য বলতেন, “জুয়েল, রকিবুল হাসান তো অল পাকিস্তান টিমে চান্স পেয়েছে। তোমারে তো নিল না।”

জন্ম-রসিক জুয়েল বলতো,”এজন্যই তো অল পাকিস্তান ভেঙে দিচ্ছি। নিজেদের টিম করবো। সেখানে ওপেনিং এ নাইমা এমুন পিডানি পিডামু…” 😰😭

১৯৭১ সালের ২৯শে আগস্ট…আহত হয়ে জুয়েল, বড় আঙ্গুলের অবস্থা খুবই খারাপ। জুয়েল বলেন “আমি তো ভাবছি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে একহাত দিয়েই নিজেদের টিমে ওপেনিং করবো।” 😰

ধরা পড়ার পরে এক পাকিস্তানি অফিসার জুয়েলকে এসে বলেছিল, “তুমি সব স্বীকার করো। তোমার উজ্জ্বল ভবিষ্যত। পাকিস্তান টিমে খেলার অনেক সুযোগ তোমার। সব স্বীকার করো। তোমার সঙ্গীদের নাম বলে দাও”।

জুয়েল স্বীকার করেননি।

ওই পাক অফিসারটা জুয়েলের জখম হওয়া আঙ্গুল তিনটা মুচড়ে দিয়েছিল। যন্ত্রণায় ছটফট করেছিল জুয়েল, বুক ফাটা আর্তনাদে ভারী হতে থাকে ঢাকার আকাশ, সেই আর্তনাদে মিলিয়ে যেতে থাকে স্বাধীন বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলতে চাওয়া এক ক্রিকেটারের স্বপ্ন। কিন্তু স্বীকার করেনি জুয়েল, কোনোভাবেই তাঁর মুখ থেকে একটি শব্দও বের করে আনতে পারেনি ওরা।

৩১ আগষ্টের পর আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি জুয়েলের।

আজক মাঠে তারে অসম্মান করা হচ্ছে। মাঠের মধ্যে কিছু কুলাঙ্গার এদেশীয় নামে পাকিস্তানের সন্তানরে পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে উল্লাস করে, কিভাবে পারে এরা বুঝে আসছে না।

মিহির দাশ, ঢাকা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *