#যুক্তরাজ্য

ব্রিটিশ সেনাদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে রাশিয়ার আদালত।

ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হাতে আটক দুজন ব্রিটিশ এবং মরক্কোর একজন নাগরিককে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে বলে খবর দিচ্ছে রুশ মালিকানাধীন সংবাদ সংস্থা রিয়া নভোস্তি। ব্রিটেনের নটিংহামশায়ারের বাসিন্দা ২৮ বছরের এইডেন আসলিন, বেডফোর্ডশায়ারের বাসিন্দা ৪৮ বছর বয়স্ক শন পিনার এবং তৃতীয় আরেক ব্যক্তি মরক্কোর নাগরিক সাউদুন ব্রাহিমকে দোনেৎস্ক গণপ্রজাতন্ত্রের একটি আদালতে হাজির করা হয়। এই কোর্ট পরিচালনা করে রুশ সমর্থক বিদ্রোহীরা। এই আদালত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়। এটি কার্যত রাশিয়ার অনুগত একটি আদালত।

তাদের বিরুদ্ধে ভাড়াটে সেনা হিসাবে কাজ করার অভিযোগ আনা হয় বলে জানা গেছে। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের, দোনেৎস্কের সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা উৎখাতের এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানোর ব্যাপারে প্রশিক্ষণ নেবারও অভিযোগ আনা হয়। তাদের আইনজীবীরা বলছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন। তবে দুই ব্রিটিশ ব্যক্তির পরিবার বলেছে, তারা ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীতে কাজ করতেন। বলা হচ্ছে তারা দুজনেই ২০১৮ সাল থেকে ইউক্রেনে বসবাস করছেন।

তারা দুজনেই ইউক্রেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ছিলেন বলে বলা হচ্ছে এবং যুক্তরাজ্য স্পষ্ট জানিয়েছে যে, তারা যুদ্ধবন্দী এবং সেই হিসাবে তাদের শাস্তি থেকে অব্যাহতি পাবার অধিকার আছে। ব্রিটেন বলছে, যুদ্ধে অংশ নেবার জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি করা উচিত হয়নি। রিয়া নভোস্তি তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানিয়েছে, ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক-এর সুপ্রিম কোর্ট ভাড়াটে সেনা ব্রিটিশ এইডেন আসলিন ও শন পিনার এবং মরক্কোর সাউদুন ব্রাহিম-এর বিচারে প্রথম সাজা প্রদান করে তাদের মুত্যুদণ্ড দিয়েছে বলে আদালত কক্ষ থেকে খবর দিচ্ছেন রিয়া নভোস্তির সংবাদদাতা।’

ব্রিটিশ দুই বন্দিকে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার আদালতে হাজির করা হয়। তাদের আটক রাখা হয়েছিল দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকে। তাদের আদালতে হাজির করার একটি ভিডিও ফুটেজ থেকে দেখা যায় আসলিন এবং পিনার আদালতে শুধু নিশ্চিত করেন যে, তাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে সে বিষয়ে তারা অবগত আছেন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই এই বিচার চলার ব্যাপারে তারা সন্তুষ্ট। কোনরকম সাহায্য ছাড়া তারা দাঁড়াতে পারছিলেন এবং দেখে মনে হচ্ছিল তারা কোথায় আছেন সে ব্যাপারে তারা ওয়াকিবহাল। এ অঞ্চলকে স্বঘোষিত দোনেৎস্ক পিপলস প্রজাতন্ত্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ২০১৪ সালে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। শুরুর দিকে দেশটির রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে ব্যাপক গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে থাকে রুশ বাহিনী। পরে কিয়েভের পাশ থেকে সেনাদের সরিয়ে নিয়ে রাশিয়া ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলে তাদের সামরিক শক্তি ও হামলা বাড়াতে শুরু করে। ইতোমধ্যে দোনবাসের অধিকাংশ এলাকা ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতছাড়া হয়েছে।

চলমান যুদ্ধে দুই পক্ষেরই সেনাদের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। তবে ইউক্রেন বলছে, রুশ হামলায় তাদের বহু বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধের কারণে ইতোমধ্যে ইউক্রেন ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিয়েছেন অর্ধকোটিরও বেশি মানুষ; অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও লাখ লাখ মানুষ।

ইতোমধ্যে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহরের নিয়ন্ত্রণ রুশ বাহিনীর হাতে চলে গেছে। এরমধ্যে বন্দরনগরী মারিউপোল অন্যতম। এ শহরটির নিয়ন্ত্রণ ইউক্রেনের হাতছাড়া হওয়াকে যুদ্ধে দেশটির বড় ধরনের হার হিসেবে দেখা হচ্ছে। শহরটিতে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্টিল কারখানা। মারিউপোল দখলের পর প্রায় এক হাজার ইউক্রেনীয় সেনাকে আটক করে রাশিয়া।

তথ্যসূত্র : জনমত।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *