#সম্পাদকীয়

ঘোলাটে হচ্ছে পাক-ভারত পরিস্থিতি !

পরিস্থিতির সূচনা ও উত্তেজনার মূল কারণ:

৭ই মে ভারত আজাদ কাশ্মীরে “সন্ত্রাসী ঘাঁটি” লক্ষ্য করে সামরিক অভিযান চালায়। আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইনের পরিপন্থী এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালায় ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের সামরিক স্থাপনাগুলিতে। এই পাল্টাপাল্টি আক্রমণ মূলত প্রতীকী শক্তি প্রদর্শনের অংশ, যা চাইলেই বন্ধ করে কূটনৈতিক আলোচনায় বা জাতিসংঘে তোলা যেত। কিন্তু দুই দেশই আলোচনার বদলে জাতীয় গর্ব ও প্রতিপত্তির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক জটিলতা ও বাহ্যিক হস্তক্ষেপ:

ভারত বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের সাথে একাধিক সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ। শুধু অস্ত্র নয়, এই দুই দেশ থেকে ভারত আধুনিক প্রশিক্ষণ ও গোয়েন্দা প্রযুক্তিও পায়। ঘটনার একদিন পরেই গুজরাটে ১৭টি বিশাল মার্কিন সামরিক পরিবহন বিমান (C-17) অবতরণ করে—এটা যুদ্ধ সরঞ্জাম পাঠানোর স্পষ্ট ইঙ্গিত।

প্রথম ধাক্কায় ভারত বেশ কিছু উন্নতমানের যুদ্ধবিমান হারিয়েছে বলে জানা গেছে। এর প্রতিশোধ হিসেবে গত দুই দিন ধরে ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব ড্রোন ইসরায়েল থেকে এসেছে।

রাজনৈতিক মন্তব্য ও গোপন সমর্থন:

একটি টিভি সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেন যে, তিনি চেয়েছিলেন ভারত ও পাকিস্তান নিজেরা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ুক, কিন্তু CIA-এর চাপে ভারতের পক্ষ নিতে বাধ্য হন। তাঁর এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, ভারতের প্রতি সমর্থন শুধুমাত্র কূটনৈতিক নয়—সামরিকও।

এছাড়া, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও ভারতকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

পাকিস্তানের পক্ষে সমর্থন:

কৌশলগতভাবে চীন সবসময়ই পাকিস্তানের পাশে থাকে। একইভাবে ইরান ও বেশ কিছু মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক দেশ, বিশেষ করে OIC-এর অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রগুলো নীরবভাবে পাকিস্তানের পক্ষ নেবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

নেতৃত্বের ভূমিকা ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতি:

প্রবন্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। লেখকের মতে, মোদি নিজের ভোটের স্বার্থে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করেছেন, যেখানে “খাল কেটে কুমির এনেছেন”—অর্থাৎ, তিনি এমন এক বিপদ ডেকে এনেছেন যা এখন সামলানো কঠিন।

অন্যদিকে, পাকিস্তানও আত্মসংযমের পথ না নিয়ে বীরত্ব দেখানোর প্রবণতায় জড়িয়ে পড়েছে, যার পরিণতিতে দেশটি নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে যদি আমরা কেবল নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারতাম, হয়তো কিছুটা স্বস্তি মিলতো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এমন উত্তেজনাকর পরিবেশে নিরপেক্ষ থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশ্বরাজনীতির জটিল আবর্তে উপমহাদেশ যেন আরও একবার বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে।

এটি কেবল দুই দেশের বিষয় নয়—আন্তর্জাতিক মহলও সরাসরি বা পরোক্ষভাবে এতে যুক্ত হয়ে পড়ছে, যা বিশ্ব রাজনীতিতে এক বিপজ্জনক মোড় তৈরি করছে।

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *