সংযম কোথায় ?

মুসলমানদের জন্যে নিঃসন্দেহে রমজান মাসটি অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ন। নিৰ্দিষ্ট কিছু ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে সমগ্র মানব সমাজের কাছে বার্তা প্রেরণ করার এক চমৎকার বিধান তৈরী করেছেন আল্লাহ রব্বুল আলামিন।
রোজার মাসের প্রধান প্রতিপাদ্য হচ্ছে ত্যাগ ও সংযম। পানাহার পরিত্যাগের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য যেমন লাভ করা সম্ভব, তেমনি অভুক্তদের পীড়া অনুধাবন করে সংযমের শিক্ষা অর্জন করা যায়। সকল প্রকার অনৈতিক-অপরাধমূলক কাজ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ ইসলাম এমনিতেই দিয়ে রেখেছে। রোজার মাসে কঠিন অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে নিজের অসঙ্গতি ও অপূর্ণতাকে শুধরে নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।
মুসলমানরা রমজান মাসটাকে উৎসবের মতই গ্রহণ করেন। আল্লাহ পাঁকের সান্নিধ্য পাওয়ার এমন অপূর্ব সুযোগ আর কোন মাসে থাকেনা। রোজায় অন্যান্য ইবাদতের পাশাপাশি ‘সেহরি ও ইফতার’ যথেষ্ট অর্থ বহন করে। বিশেষ করে ইফতার। সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করা হয়। দুৰ্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, এই ইফতারের বাহুল্য সংযম ও ত্যাগের মহিমাকে অনেকটাই ম্লান করে দেয়।
ইফতার করা সুন্নত। নবী করিম (সঃ) হাদিসের মাধ্যমে উৎকৃষ্ট পন্থায় সংযম বজায় রেখে ইফতারের তরিকা বলে দিয়ে গেছেন। সাহাবী, তাবে-তাবেঈনরাও একই পন্থায় ইফতার আদায় করেছেন। তাঁদের আহার গ্রহণের মধ্যে পর্যাপ্ত খাবার থাকলেও কোন বাহারী বাহুল্যতা পরিলক্ষিত হয়নি। কোরান – হাদিসের নির্দেশ মেনে যথাযত মর্যাদায় সিয়াম পালন করেছেন তাঁরা।
দুৰ্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, বর্তমানে আমাদের মধ্যে ইফতারকে অতিরঞ্জিত করার এক অসংযত মানসিকতা তৈরী হয়েছে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ইফতারের খাদ্য সামগ্রী প্রদর্শনের একটি ধারা তৈরী হয়েছে। লোক দেখানো সংস্কৃতি ও রসনা বিলাসের তোড়ে মূল ইবাদত থেকে অনেকটাই সড়ে এসেছি আমরা। জাতি বর্ণ নির্বিশেষে প্রায় সকলখানেই এই অসংযমের প্রতিযোগিতা বিদ্যমান।
সারাদিন অভুক্ত থেকে সওয়াব হাসিলের যে কঠিন তপস্যা আমরা করি, শেষ মুহূর্তের একটুখানি ভূলের জন্যে সব মলিন হয়ে যায়। রমজানের মূল প্রতিপাদ্য থেকে সড়ে এসে আমরা অপ্রয়োজনীয় কর্মকান্ডে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ি। শ্রম সমানই থাকে, মাঝখান থেকে ফলাফল শুন্য হয়ে যায়।
আসুন, এই রমজানে আমরা সংযম ও ত্যাগের সঠিক পন্থায় নিজেকে পরিচালিত করি। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদেরকে তৌফিক দান করুন।