#সম্পাদকীয়

ঘোলাটে পরিস্থিতি !

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান এই সংঘাত, অধুনা উদ্ভুত কোন পরিস্থিতির ফলাফল নয়। ইতিহাস খুঁজলে এমন অনেক বিষয়ই উঠে আসবে, যা আজকের এই আগ্রাসনের কারণ কিছুটা হলেও ব্যাখ্যা করবে।

হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য পর্যালোচনা করলে এমন অনেক প্রমানই সামনে আসে, যা দুটি দেশকে এক এবং অভিন্ন হিসেবে আখ্যায়িত করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক আগে থেকেই রাশিয়া ও ইউক্রেন একন্দ্রীভূত ছিলো। ভাষা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির দিক থেকে এই দুটি দেশই প্রায় এক। জাতিগত দিক থেকে ইউক্রেনের প্রায় অর্ধেক মানুষই রাশিয়ার আদিবাসী। ভূ-রাজনৈতিক ও বাণিজ্য কেন্দ্রিক কার্যক্রমে ইউক্রেন বরাবরই রাশিয়ার অন্যতম প্রদেশ হিসেবে গণ্য হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় রাশিয়া ইউক্রেনকে তার প্রযুক্তি উৎকর্ষের অন্যতম স্থানে পরিণত করেছিল।
রাশিয়ার পারমানবিক গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু ছিলো ইউক্রেন। এছাড়াও রাশিয়ার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের অনেক কিছুই ইউক্রেনের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।

নিজেদের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় রাশিয়া ইউক্রেনকে কখনোই হাতছাড়া হতে দিবে না।
আমেরিকা ও ইউরোপ মিলে যে ছক কষেছিলো রাশিয়াকে কোনঠাসা করার, তার খেসারত দিচ্ছে ইউক্রেন। বাস্তুচ্যুত লাখ মানুষ, হতাহতের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। চোখের সামনেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ একটি দেশ, যার মাশুল গুনতে হবে আগামী কয়েক প্রজন্মকে।

রাজনৈতিক দূরদর্শিতা না থাকলে কী পরিণতি হয় তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ইউক্রেনের জনগণ। শক্তিশালী প্রতিবেশীকে উপেক্ষা করে, দূরবর্তী বন্ধুর আহ্বানে সাড়া দেওয়া কী ভয়ঙ্কর ভূল ছিলো তা ইতিহাসের কালো অধ্যায় হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে ইউক্রেনে।

দুই দেশের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পশ্চিমা বিশ্ব এখনো ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে ব্যস্ত। ইউক্রেনের কাঁধে বন্দুক রেখে শিকার চালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। হাস্যকর হলেও সত্যি, যারা রাশিয়ার উপর ছড়ি ঘুরানোর পায়তারা করছে, তারা সকলেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাশিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল। এমতাবস্থায়, যদি রাশিয়া সেই সকল উন্নত বিশ্বকে সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তবে এর পরিণতি কী ভয়াবহ হতে পারে, তা কল্পনাতীত ! আর যদি কোন কারণে ন্যাটো ভুক্ত কোন দেশ রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়ায়, তবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবধারিত। এখন কেবল সময়ই বলে দিতে পারে যে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি ?

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *