#দেশের খবর

জেলের নামে আয়েশী জীবন !

শারীরিকভাবে অসুস্থ নন। নেই অসুস্থতার কোন লক্ষণ। প্যাথলজিক্যাল রিপোর্টও স্বাভাবিক। তবু নানা অসুস্থতার অজুহাতে হাসপাতালে ভর্তি আছেন, কাটাচ্ছেন আয়েশী জীবন। নিয়মিত খাচ্ছেন উন্নতমানের খাবার।

কোনো আইনি বাধা ছাড়াই দেখা পাচ্ছেন পরিবারেরও। দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার প্রভাবশালী আসামিদের আধিকাংশই নানা ছুতোয় হাসপাতালে কাটাচ্ছেন সপ্তাহ, মাস থেকে বছর। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়েও তাদের রোগ সারছে না।

ফলে হাসপাতালও ছাড়তে হচ্ছে না। দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত এমন অন্তত ৮০ জন সাজা প্রাপ্ত আসামী হাসপাতালে আয়েশী জীবন কাটাচ্ছেন। তারা আবার হাসপাতালেও আছেন অনেকটা ভিআইপি মর্যাদায়। কারো বাসা থেকে স্ত্রীর রান্না করা খাবার আসছে, কারো ‘বাইরে থেকে’ আসছে ব্যবহার্য নানা তৈজসপত্র ।

কেউ কেউ হাসপাতালে থেকেই টেলিফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কারাগারের বাইরের লোকদের সঙ্গে রক্ষা করছেন স্বাভাবিক যোগাযোগ। চালাচ্ছেন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও পরিবার। সময় কাটাচ্ছেন স্বজন বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে খোশগল্প করে।

তবে চিকিৎসা শেষে জেলে ফেরাতে কারাগার থেকে বারবার তাগিদ দিলেও হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের ‘ছাড়পত্র’ না পাওয়ায় তাদের কারাগারেও নেয়া যাচ্ছে না। জি কে শামীম, ইসমাঈল হোসেন সম্রাট, ডেসটিনির রফিকুল আমিন, যুবলীগ নেতা খালেদ, মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি ওহিদুল হকসহ শতাধিক আসামি বা সাজাপ্রাপ্ত বন্দি চিকিৎসার জন্য কারাগারের বাইরে হাসপাতালে আছেন।

এর মধ্যে কেউ কেউ মাসের পর মাস, বছরের পর বছর টানা হাসপাতালে থাকছেন। দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকতেও ঢালছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। আর এসব টাকা যাচ্ছে কারাগার ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের পকেটে।

এর মধ্যে ডেসটিনির রফিকুল আমিনকে হাসপাতাল থেকে কারাগারে ফেরাতে ২৭ বার চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি। প্রায় এক বছর পাঁচ মাস ধরে তিনি হাসপাতালের একটি কক্ষে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে তার স্বজন ও কারাগারের চিকিৎসকদের দাবি, তিনি অসুস্থ বলেই কারাগারা পাঠানো হচ্ছে না।

কারাগার ছেড়ে অযথা হাসপাতালে থাকা নিয়ে বিশ্লেষকরা বলেন, নানা অসুখের মিথ্যা তথ্য দিয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকা আসামিরা প্রত্যেকেই দুর্নীতি দমন কমিশন দায়েরকৃত মামলার আসামি।

তাদের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগই হচ্ছে তারা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের মালিক ও বিদেশে টাকা পাচারকারী এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা নামে-বেনামে অর্জন করেছেন বিপুল অংকের অবৈধ সম্পদ।

এ অবৈধ অর্থসম্পদ তারা ব্যয় করেন বন্দি থেকেও আয়েশী জীবন যাপনের পেছনে। তাদের দাবি, কারাগারের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমনকি কারা হাসপাতাল এবং কারাগারের বাইরে হাসপাতালের ডাক্তারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে চিকিৎসার নামে কারাগারের বাইরে অবস্থান করছেন।

কখনো চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন ভিআইপি মর্যাদায়। কারাগারের বাইরে অবস্থানকালে কথিত এই বন্দিদের ওপর নজরদারি ব্যবস্থা যেমন শিথিল, তেমনি ব্যয় হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ ও জনবল। অথচ গ্রেপ্তার এবং কারাগারে প্রেরণের পরবর্তী অবস্থা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই দুদকের। এ ক্ষেত্রে তারা দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে হাসপাতাল এবং কারাগার সূত্রে জানা যায়, এ মুহূর্তে সারা দেশে অন্তত ৮০ জন দুর্নীতি মামলার আসামি নানা শারীরিক সমস্যা দেখিয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। এর মধ্যে ২০ জনই রয়েছেন ‘ভিআইপি’ সুবিধা নিয়ে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউট, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঢাকার বাইরে অন্তত ৬০ আসামি অসুস্থতার অজুহাতে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। কিন্তু তাদের চিকিৎসা কবে শেষ হবে কেউ বলতে পারছেন না।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *