#ইসলাম ও জীবন দর্শন

অকাট্য প্রমাণ ছাড়া কাউকে কাফির বলা যাবে না।

যেকোনো আদর্শ ও বিশ্বাস প্রথমে ধারণ করতে হয়, এরপর সেটি মনেপ্রাণে লালন করতে হয়। কেউ নিজের আদর্শ ও বিশ্বাসবিরোধী কোনো কাজ করলে তাকে ওই আদর্শচ্যুত ও অবিশ্বাসী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ঈমান ও ইসলাম একটি আদর্শ ও বিশ্বাসের নাম। একবার ঈমান আনলেই কেউ চিরকাল মুসলমান থাকে না। ঈমানের সঙ্গে আমলের সংযোগ স্থাপন করতে হয়। ঈমানের ওপর অবিচল থাকতে হয়। তাই কোনো মুসলমানের জন্য কুফরি শব্দ ব্যবহারের সুযোগ নেই। আল্লামা শামি (রহ.) লিখেছেন, ‘যে ব্যক্তি রসিকতা করে কিংবা খেলতামাশাচ্ছলে কুফরি শব্দ উচ্চারণ করে, সব আলেমের ঐকমত্যে সে কাফির হয়ে যাবে।’ (ফতোয়ায়ে শামি : ৪/২২৪)

ফতোয়ায়ে আলমগিরিতে বিষয়টি আরো সুন্দরভাবে এসেছে—‘ব্যঙ্গবিদ্রুপকারী যদি শরিয়তের কোনো বিধানকে হালকা মনে করে উপহাস করে এবং কুফরি শব্দ ব্যবহার করে, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে, যদিও আন্তরিক বিশ্বাস এর বিপরীত হয়।’ (ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ২/৩৭৬)
যেসব কারণে ব্যক্তি মুরতাদ বলে গণ্য হবে

যেসব কারণে ব্যক্তি মুরতাদ বা ইসলাম ধর্ম ত্যাগী হয়ে যায়, এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো—

এক. আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে বেয়াদবিমূলক কথা, কাজ বা আচরণ প্রদর্শন করা।
দুই. ইসলামের শিআর তথা প্রতীকসমূহের অবমাননা করা। এগুলো নিয়ে ঠাট্টাবিদ্রুপ করা। ইসলামের মৌলিক শিআর বা নিদর্শন হলো, কোরআন, রাসুলুল্লাহ (সা.), বিভিন্ন ইবাদত যথা—নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, দোয়া-দরুদ; বিভিন্ন ফজিলতপূর্ণ স্থান যথা—মসজিদ-ই-নববী, কাবা শরিফ, মসজিদুল আকসা এবং পৃথিবীর সব মসজিদ ইত্যাদি।

তিন. ইসলামের কোনো বিধান, ইসলামের সঙ্গে সম্পর্কিত সাধারণ কোনো বিষয়, নবীজির কোনো সুন্নত, এমনকি প্রমাণিত কোনো মুস্তাহাব আমলের প্রতি অবজ্ঞাসূচক বাক্য ব্যবহার করা অথবা অবজ্ঞা-প্রকাশক কোনো আচরণ করা কুফরি।

চার. জরুরিয়াতে দ্বিন তথা সর্বজনবিদিত অকাট্য ধর্মীয় কোনো বিষয় অস্বীকার করা, অপছন্দ করা কিংবা তার ওপর আপত্তি করা বা তা সংস্কারযোগ্য বলে মনে করা।
পাঁচ. ইসলাম ত্যাগ করে অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করা কিংবা কোনো ধর্মই না মানা।

ছয়. এমন কোনো কাজ করা বা বিশ্বাস পোষণ করা, যা আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের পরিপন্থী।

সাত. অন্যদের ধর্মীয় প্রতীক গ্রহণ করা।

অকাট্য প্রমাণ ছাড়া কোনো মুসলমানকে কাফের বলা যাবে না

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি (অন্যায়ভাবে) তার মুসলমান ভাইকে ‘কাফির’ বলে, নিঃসন্দেহে তাদের যেকোনো একজনের প্রতি কুফরি আপতিত হবে। তার কথায় বাস্তবতা না থাকলে কুফরি তার নিজের দিকেই বর্তাবে।’ (বুখারি : ২/৯০১, মুসলিম : হাদিস ১১১)

এই হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায়, অকাট্য প্রমাণ ছাড়া কোনো মুসলমানকে ‘কাফির’ বলা হারাম। এমনকি অজ্ঞতাবশত কেউ শরিয়তের কোনো বিধান অস্বীকার বা বিরোধিতা করলেও তার বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। (মুখতাসারু ফতোয়া মিসরিয়া : ৫৭২; আল আওয়াসেম : ৪/১৭৪) ।

লেখক: মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *