প্রিয় অধরা – সৈয়দ মিনহাজুল ইসলাম (শিমুল) ।

প্রিয় অধরা,
শুরুটা কিভাবে করবো, ঠিক ঠাহর করতে পারছিনা ? মনের কোণে যে বাষ্পগুলি ঘুরপাক খাচ্ছে, তা কিভাবে উদ্গ্রীপ্ত হবে, আমার জানা নেই ? বলতে না পারা শত সহস্র অনুভূতিগুলি কুন্ডলি পাকিয়ে কণ্ঠনালী রুদ্ধ করে রেখেছে। তুমিতো জানো, আমি বরাবরই অপ্রকাশ্য ! ভেতরের ঝড় ঝঞ্ঝাটগুলি অন্তরেই গুমরে মরে। অনেকবার চেষ্টা করেও পারিনি তোমাকে বলতে যে , আমার পৃথিবী সংকীর্ণ। তুমি অনুভব করেছো কিনা জানি না? তবে আমার অস্তিত্ব সব সময়ই আশে পাশে ছিলো।
মনে পড়ে, প্রথম যেদিন আনমনে তুমি আমার হাতটা ধরে বলেছিলে, সুজন – ভালোবাসার অনুভূতি কেমন হয় ? আমি কেমন যেনো বাক্যহীন হয়ে পড়েছিলাম ! তোমার স্পর্শের শিহরণ শিরায় শিরায় কি এক অদ্ভুত আলোড়ন তুলে ছিলো ! আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি ? আমি, ঠিক বলে উঠতে পারিনি যে, এই মুহূর্তে আমার ভেতরে যা চলছে, তাকেই বোধ হয় ভালোবাসার আচ্ছাদন বলে। তুমি আমার পানে চেয়ে বক্র হাসি দিয়ে বলেছিলে, কি বুদ্ধুরাম ? এর আগে কোন নারীর ছোঁয়া পাওনি ? আমি কেমন যেনো মিইয়ে গিয়েছিলাম। আমতা আমতা করে বলেছিলাম, না মানে মা ছাড়া আর কেউ আমার এতো কাছে কখনো আসেনি। তুমি অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে ছিলে। তোমার চোখে দুষ্টমি আর করুনা মিশ্রিত অভিব্যক্তি দেখে আমি ভিতরে ভিতরে কুকড়ে গিয়েছিলাম।
দিন মাস বছর কেমন দ্রুত অতিবাহিত হয়। আমাদের ভিতরের অপ্রকাশিত অনুভূতিগুলি কেমন দ্রুত বিস্তৃত হতে লাগলো। কোন শব্দের ব্যবহার না করেও একে ওপরের চোখের দিকে তাকিয়ে কেমন সবকিছু পড়ে নিতে লাগলাম। আস্তে আস্তে অধিকারের মাত্রাও বাঁধ ভাঙতে লাগলো। ভেতর বাহির একাকার হয়ে গেলো। সম্মোহনের ঢেউয়ে কোথায় ভেসে যেতে লাগলাম, আমরা নিজেরাও জানলাম না ?
সেদিন বিকেলে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিলো। পার্কের বেঞ্চিতে বসে ভেজা কাকের ন্যায় তোমার অপেক্ষায় এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলাম। হঠাৎ চোখ পড়লো আমার পিছন দিকে তুমি অনেকটা উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে আসছো।
রাজ্যের সকল মেঘ যেনো তোমার মুখখানিকে গ্রাস করে রেখেছে। ধপ করে পাশে এসে বসলে। আমাকে উপেক্ষা করে সামনের বড় গাছটার দিকে তাকিয়ে রইলে। আমি বাক্যহারা হয়ে শুধু তোমার মুখটির পানে চেয়ে রইলাম।
এভাবে কতক্ষন ছিলাম জানি না ? কোন পূর্বাভাস না দিয়েই তুমি বলে উঠলে – আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। ছেলে সরকারী বড় চাকুরে। আগামী মাসেই কন্যাদান হবে। জানি তোমাকে বলে কোন লাভ নেই, তবুও মোহ কাটাতেতো হবে। প্রথম যেদিন তোমার হাত ধরেছিলাম, সেদিনই বুঝেছিলাম যে তুমি আমাকে ধরে রাখতে পারবে না। কাপুরুষ তুমি নও, তবে স্রোতের উল্টো চলতে হলে যে স্বার্থপর সাহসের প্রয়োজন হয়, তা তোমার নেই। তোমার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারিনি, সেটা হয়তো আমার ব্যর্থতা। কোন কিছুতেই তুমি আমাকে বাধ্য করোনি – বাঁধাও দাওনি। সুজন, আজকের সমাপ্তিতে কোন আক্ষেপ রইবে না কারণ আমি জানি তুমি আমাকে ঠকাও নি।
সেদিনের পর আর তুমি আসনি অধরা। আমারও সাহস হয়নি তোমাকে খুঁজে বের করার। যে পথে একসাথে হাঁটার সুযোগ কখনো হবেনা, সে পথের সন্ধান চেয়ে লাভ কি বলো ? এতগুলি বছর তুমি শুধু আশাই করে গেছো যে আমার কথার বাঁধ ভাঙবে। ইচ্ছে যে আমার হয়নি তা না, কিন্তু পারিনি হাজার বছরের সামাজিক শৃঙ্খলকে ভাঙতে। ধুপ ধুনোর আবিষ্টে যে ঈশ্বরের আরাধনায় তুমি মত্ত থাকো, আমার সংস্কৃতিতে তার কোন স্থান নেই। ভক্তির পাহাড় সম ব্যবধান ডিঙানোর ক্ষমতা আমার ছিলোনা জেনেই তুমি কখনো জোর করোনি। বুকে এক সমুদ্র কষ্ট চেপে নিয়ে আমাকে মুক্তি দিয়ে গেলে। অধরা .., আমি জানিনা এই চিঠিটা কখনো তোমার হাতে পৌঁছবে কিনা ? শুধু জেনে রেখো, তোমার অস্তিত্ব কোন কালেই বিলীন হবার নয়। ভালো থেকো।