রাসুলের যুগে নারী চিকিৎসক।

রুফাইদা আল আসলামিয়া (রা.) ছিলেন খাজরাজ গোত্রের শাখা আসলাম গোত্রের সন্তান। তাই তাঁকে রুফাইদা আল আসলামিয়া (রা.) নামেই সবাই চিনতেন। মদিনায় রাসুল (সা.) ইসলামের দাওয়াত নিয়ে গেলে সর্বপ্রথম যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, তিনি তাঁদের একজন। রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে অনেক যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন।
তিনি ছিলেন প্রথম নারী মুসলিম সেবিকা হিসেবে স্বীকৃত একজন ইসলামী চিকিৎসক। তিনি মূলত তাঁর চিকিৎসক বাবা সাদ আল-আসলামির কাছ থেকে চিকিৎসাবিদ্যা সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি চিকিৎসাবিদ্যায় এতই ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন যে রাসুল (সা.) যুদ্ধে আহত সব সৈনিককে তাঁর কাছে চিকিৎসার জন্য পাঠাতেন। তিনি আহতদের সেবায় মসজিদে একটি তাঁবু করেছিলেন। তাঁর দায়িত্বাধীন সেই অস্থায়ী হাসপাতালকে বলা হতো খিমাতু রুফাইদা। মাহমুদ ইবনে লাবিদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, খন্দকের যুদ্ধের দিন সাআদ (রা.)-এর চোখ আঘাতপ্রাপ্ত হলে এবং তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁকে রুফাইদা নামক এক নারীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হলো। তিনি আহতের চিকিৎসা করতেন। নবী (সা.) সকাল-সন্ধ্যায় সাআদ (রা.)-এর কাছ দিয়ে যেতে জিজ্ঞেস করতেন, তোমার দিন কেমন কাটল, তোমার রাত কেমন কাটল? তিনি তাঁকে (নিজ অবস্থা) অবহিত করতেন। (আদবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১৩৯)
আজকের পৃথিবীর ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল ও চিকিৎসার ধারণাটি এখান থেকেই মানুষ নিয়েছে। (এডি জাব্বার, ইউনে হিসতোরিয়ে, পৃষ্ঠা : ৩১৯)
খাইবার যুদ্ধে আহত মুসলিম মুজাহিদদের সুস্থ করতে তিনি মাতৃত্বের মমতাময়ী হাত বাড়িয়ে দেন। তাঁর এই অবিস্মরণীয় ত্যাগ এবং সেবা-শুশ্রূষার স্বীকৃতিস্বরূপ রাসুল (সা.) পুরুষ মুজাহিদদের সঙ্গে তাঁকেও গণিমতের সম্পদের হিস্যা দিয়েছিলেন। আজকের বিশ্বেও তিনি নারী চিকিৎসক ও নার্সদের আইডল হয়ে আছেন। তাঁর সম্মানে বাহরাইনের Royal College of Surgeons in Ireland প্রতিবছর Rufaida Al-Aslamia Prize in Nursing প্রদান করা হয়। ছাত্র-ছাত্রী কর্তৃক রোগীদের সেবা দেওয়ার ওপর ভিত্তি করে এই পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে।
লেখক : মুফতি আব্দুল হাশিম।